হেমাঙ্গ বিশ্বাস স্মরণে
হিমালয়ের চেয়ে ভারী শোক আমরা সহ্য করতে বাধ্য হই মাঝে মাঝে। প্রিয় সংগীতকার শ্রদ্ধেয় হেমাঙ্গ বিশ্বাস আর নেই –এই সত্য আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি ধীরে ধীরে, প্রথমে শোকস্তব্ধতায়, আর তারপরেই কঠোর ও দপ্ত শ্রমের প্রতিজ্ঞায়, যে শ্রম আমাদের ধরে রাখতে পারে তাঁর লক্ষ্যের পথে, অবিচল ।
আরেকবার আমরা নিজেদের কাছেই ঝালিয়ে নিচ্ছি তাঁর লক্ষ্যপথের শব্দগুলি — জনগণের গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণনাট্য, গণসংগীত, লোকসংগীত, লোকসাহিত্য- শিল্প, শ্রমিক-কষক-মেহনতি মানুষ। স্বাধীনতা। সংগ্রাম। বিপ্লব।…
নাজিম হিকমত প্রসঙ্গে
উনিশ শো একান্ন কি বাহান্ন সালে কলকাতায়, জানি না কী ক’রে, আমাদের বন্ধু ডেভিড কোহেনের হাতে এসেছিল নাজিম হিকমতের একগুচ্ছ কবিতার ইংরিজি তর্জমা । ইংরিজি খুব উচ্চাঙ্গের নয়। তবু প’ড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। প্রধানত সেই কবিতাগুচ্ছ অবলম্বন ক’রেই বাংলায় বার হয়েছিল আমার ‘নাজিম হিকমতের কবিতা’। অনেকে বলেন, এই সময়কার আমার নিজের অনেক কবিতাতেও নাজিম হিকমতের লেখার ছাপ পড়েছে৷
তারপর ছাব্বিশ সাতাশ বছর কেটে গেছে। মধ্যে দুবার, ১৯৫৮ আর ১৯৬২ সালে, নাজিম হিকমতের সঙ্গে আমার দেখাও হয়েছে। সুন্দর লম্বা দোহারা চেহারা। খুব নিরভিমান দিলখোলা ফুতিবাজ মানুষ। ১৯৫০-এর পর থেকেই দেশছাড়া। হাসিখুশির মধ্যেও চোখেমুখে ছায়া ফেলত একটা ক্ষীণ বিষাদ নাজিমকে কাছে পেয়েও তাঁর সঙ্গে কখনই আমার সে রকম বাক্যালাপ হতে পারে নি। নাজিম জানতেন ফরাসী আর রুশ। আমি শুধু ইংরিজি। তাছাড়া সম্মেলনের বাঁধা-ধরা আর ভিড়ে-ঠাসা প্রোগ্রাম। ফলে, নাজিমের সঙ্গে আমার হয়েছে শুধুই চোখের দেখা নাজিম যা কিছু লিখেছেন সবই তুর্কী ভাষায়। আমার দুর্ভাগ্য, আজ পর্যন্ত তুর্কী ভাষা জানেন এমন কাউকেই হাতের কাছে না পাওয়ায় ইংরিজি তর্জমাই হয়েছে আমার কাছে অন্ধের যষ্টি।
নাজিমকে আমি শেষ দেখি ১৯৬২ সালে মস্কোয়।…