মানুষের একটা দিক আছে যেখানে বিষয়বুদ্ধি নিয়ে সে আপন সিদ্ধি খোঁজে। সেইখানে আপন ব্যক্তিগত জীবযাত্রা-নির্বাহে তার জ্ঞান, তার কর্ম, তার রচনাশক্তি একান্ত ব্যাপৃত। সেখানে সে জীবরূপে বাঁচতে চায়।
কিন্তু, মানুষের আর-একটা দিক আছে যা এই ব্যক্তিগত বৈষয়িকতার বাইরে। সেখানে জীবনযাত্রার আদর্শে যাকে বলি ক্ষতি তাই লাভ, যাকে বলি মৃত্যু সেই অমরতা সেই অমরতা। সেখানে বর্তমান কালের জন্যে বস্তু সংগ্রহ করার চেয়ে অনিশ্চিত কালের উদ্দেশে আত্মত্যাগ করার মূল্য বেশি। সেখানে জ্ঞান উপস্থিত-প্রয়োজনের সীমা পেরিয়ে যায়, কর্ম স্বার্থের প্রবর্তনাকে অস্বীকার করে। সেখানে আপন স্বতন্ত্র জীবনের চেয়ে যে বড়ো জীবন সেই জীবনে মানুষ বাঁচতে চায়।
স্বার্থ আমাদের যে-সব প্রয়াসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় তার মূল প্রেরণা দেখি জীবপ্রক্বতিতে; যা আমাদের ত্যাগের দিকে তপস্যার দিকে নিয়ে যায় তাকেই বলি মনুষ্যত্ব, মানুষের ধর্ম।
কোন্ মানুষের ধর্ম। এতে কার পাই পরিচয়। এ তো সাধারণ মানুষের ধর্ম নয়, তা হলে এর জন্যে সাধনা করতে হত না৷
আমাদের অন্তরে এমন কে আছেন যিনি মানব অথচ যিনি ব্যক্তিগত মানবকে অতিক্রম করে ‘সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ’, তিনি সর্বজনীন সর্বকালীন মানব। তাঁরই আকর্ষণে মানুষের চিন্তায় ভাবে কর্মে সর্বজনীনতার আবির্ভাব। মহাত্মারা সহজে তাঁকে অনুভব করেন সকল মানুষের মধ্যে, তাঁর প্রেমে সহজে জীবন উৎসর্গ করেন। সেই মানুষের উপলব্ধিতেই মানুষ আপন জীবসীমা অতিক্রম করে মানব-সীমায় উত্তীর্ণ হয়। সেই মানুষের উপলব্ধি সর্বত্র সমান নয় ও অনেক স্থলে বিকৃত বলেই সব মানুষ আজও মানুষ হয় নি। কিন্তু…
মানুষের ধর্ম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
প্রকাশক : শ্রীকানাই সামন্ত, বিশ্বভারতী। 
৫ দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন, কলিকাতা-৭
প্রথম প্রকাশ : ১৯৩৩
পুনর্মুদ্রণ : ১৯৪৬, সেপ্টেম্বর ১৯৬০
সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ : ১৮৮৫ শকাব্দ
বিশ্বভারতী : ১৯৬৩
এই গ্রন্থের প্রবন্ধত্রয় ১৯৩৩ সালে যথাক্রমে ১৬, ১৮ এবং ২০ জানুয়ারি তারিখে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৩০ সালের ‘কমলা-বক্তৃতা’রূপে পঠিত হয় । পরিশিষ্টে মুদ্রিত ‘মানবসত্য’ কমলা-বক্তৃতার অনুবৃত্তি-রূপে শান্তিনিকেতনে কথিত এবং ১৩৪০ সালের বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা প্রবাসী পত্রে মুদ্রিত হইয়াছিল।
মূল্য : ২ টাকা
 
						 
																					
 
		
		
		
	 
		
		
		
	 
		
		
		
	