…আবার তারা গ্রামে ফিরে আসে। পেছনে রেখে আসে স্বামী-স্ত্রী, পত্র-কন্যা, মা-বাপ, ভাই-বোন। ভাতের লড়াইয়ে তারা হেরে গেল।
অনেক আশা, অনেক ভরসা নিয়ে গ্রাম ছেড়ে তারা শহরের বুকে পা বাড়িয়েছিল। সেখানে মজুতদারের গুদামে চালের প্রাচুর্য, হোটেলে খাবারের সমারোহ দেখে দেখে তাদের জিভ শুকিয়ে যায়। ভিরমি খেয়ে গড়াগড়ি যায় নর্দমায়। এক মাঠো ভাতের জন্যে বড়লোকের বন্ধ দরজার ওপর মাথা ঠুকে ঠুকে পড়ে নেতিয়ে। রাস্তার কুকুরের সাথে খাবার কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়। দৌলতদারের দৌলত- খানার জাঁকজমক, সৌখিন পথচারীর পোষাকের চমক ও তার চলার ঠমক দেখতে দেখতে কেউ চোখ বোজে। নিষ্পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় কেউ বা ঐশ্বর্যারোহীর গাড়ীর চাকায় যারা ফিরে আসে তারা বহুকভরা আশা নিয়ে আসে বাঁচবার। অতী- তৈর কান্না চেপে, চোখের জল মুছে তারা আসে, কিন্তু মানষের চেহারা নিয়ে নয়। তাদের শিরদাঁড়া বে’কে গেছে। পেট গিয়ে মিশেছে পিঠের সাথে৷ ধনকের মত বাঁকা দেহ—শঙ্ক ও বিবর্ণ। তবও তারা ভাঙা মেরুদণ্ড দিয়ে সমাজ ও সভ্যতার মেরুদণ্ড সোজা করে ধরবার চেষ্টা করে। ধবকে প্রাণ নিয়ে দেশের মাটিতে প্রাণ সঞ্চার করে, শন্য উদরে কাজ করে সকলের উদরের অন্ন যোগায়। পঞ্চাশের মন্বন্তরে হচোট- খাওয়া দেশ আবার টলতে টলতে দাঁড়ায় লাঠি ভর দিয়ে।..
সুর্য-দীঘল বাড়ী
আবু ইসহাক
বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৬২-৬৩
সুন্দরবন সাহিত্য পদক, ১৯৮১
প্রথম প্রকাশ, ১৯৫৫, ১৩৬২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশনায় : নওরোজ সাহিত্য সম্ভার-এর পক্ষে বেগম মেহেরউন্নিসা,
৪৬ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০
প্রচ্ছদ : আবদুর রউফ
মূল্য : পঞ্চাশ টাকা
 
						 
																					
 
		
		
		
	 
		
		
		
	 
		
		
		
	