ভারতের গত চতুর্থ দশকের নৌ বিদ্রোহ আমাদের জাতীয় মুক্তি-সংগ্রামে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা রচনা করেছিল। কিন্তু শুধু এইটুকু বললেই বোধহয় ওই বিদ্রোহের যথার্থ মূল্যায়ন করা হয় না। যে-সকল কারণে ইংরাজ সাম্রাজ্যবাদী দস্যুরা ভারত- ত্যাগে বাধ্য হয়েছিল, তার মধ্যে আমাদের দেশের নৌ-সেনাদের ওই বিদ্রোহ ছিল নিঃসন্দেহে অন্যতম একটি প্রধান কারণ। নৌ বিদ্রোহের এই পরিচিতিই বোধহয় সঠিক ইতিহাসসম্মত ও বাস্তবভিত্তিক। ইংলণ্ডের যে-প্রধানমন্ত্রীর শাসনকালে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, সেই প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট এ্যাটলি স্বয়ং ১৯৫৬ সালে এই কলিকাতা মহানগরীতে এসে ঠিক একই কথা বলেছিলেন।
এ-কথাও তো সাধারণ মানুষের সাধারণ বুদ্ধির অগম্য নয় যে গত প্রায় দুই শত বৎসর ধরে ভারতবর্ষকে নিষ্ঠুরভাবে শৃঙ্খলিত করে রেখে যে-সাম্রাজ্যবাদী দস্যুরা অতি নির্মম ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভারতের সব সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়েছে, সেই সম্পদলিপ্স দস্যুদের আবেদন নিবেদন, যুক্তি তর্ক কিংবা দুঃখভোগের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে কখনো ভারত ত্যাগে সম্মত করা যেত না। এও তো সকলেই দেখেছে এবং সকলেই জানে যে বিদেশী ইংরাজ দস্যুদের ভারতবর্ষে বলপূর্বক অবস্থানের এবং তাদের নির্লজ্জ দস্যুতার ভিত্তিই ছিল তাদের নিয়ন্ত্রিত স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবহর। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানের অব্যবহিত পরেই কতগুলি ঐতিহাসিক কারণে যখন ইংরাজ সাম্রাজ্যবাদীদের শক্তির এই প্রধান উৎসসমূহ বিকল হয়ে যায়, তখনই তারা সন্ত্রস্তভাবে ভারত ত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এবং শুধু তাই নয়। এই সামরিক শক্তিসমূহের আনুগত্যের অবক্ষয়ের এবং বহুলাংশে পরিবর্তনের ফলে সেই সময়ে ভারতবর্ষে যে-পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল এবং সেই সাথে সে-সময়ের (১৯৪১-৪৭) ভারতবর্ষের ব্যাপকতম জনগণের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ মনোভাব লক্ষ্য করে সাম্রাজ্যবাদী নেতৃত্ব ভারতবর্ষ ত্যাগ করবার জন্য যে-দিন পূর্ব নির্দিষ্ট করেছিল (জুন ১৯৪৮) অতি অল্প সময়েই তার পরিবর্তন করে এবং ত্বরান্বিত করে (আগস্ট ১৯৪৭)।
সুতরাং ইতিহাসের বাস্তব ঘটনাবলীর ভিত্তিতে ভারতের নৌ বিদ্রোহের বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে দেখলে একথা অনস্বীকার্য বলেই প্রতীয়মান হবে যে, যে-সকল কারণ ভারতের জাতীয় মুক্তিকে ত্বরান্বিত করতে এবং সুনিশ্চিত করতে প্রত্যক্ষভাবে এবং প্রভূত পরিমাণে সাহায্য করেছে ভারতের দেশপ্রেমিক নৌ সেনাদের বিদ্রোহ সেগুলির মধ্যে অন্যতম।…
নৌ বিদ্রোহে ইতিহাস
ফণিভূষণ ভট্টাচার্য
বুক্স অ্যাও পিরিয়ডিক্যাল্স
কলকাতা
Nou Bidroher Itihash
by Phani Bhusan Bhattacharya
প্রথম প্রকাশ : বৈশাখ ১৩৮৬
দ্বিতীয় মুদ্রণ : পৌষ ১৩৮৮
দাম : চোদ্দ টাকা
প্রচ্ছদ : পূর্ণেন্দু পত্রী
প্রকাশক : অশোক ঘোষ
বুক্স অ্যাণ্ড পিরিয়ডিক্যাল্স
১/১ রমানাথ মজুমদার স্ট্রীট, কলকাতা ৭০০০০৯
মুদ্ৰক : হারাধন ঘোষ
বীণাপাণি প্রেস
২ ঈশ্বর মিল বাই লেন, কলকাতা ৭০০০০৬
