আমি সাহিত্যে নিষ্ণাত, কিন্তু ইতিহাস ও দর্শনে আমার কৌতূহল প্রচণ্ড। এবং জীবনের সকল অংশ ও উপাদান নিয়ে সাহিত্যর পরিপূর্ণতা ; সে কোনো- টাকেই ছাড়তে চায় না ও পারে না। তাই সাহিত্যের উপযোগিতা অন্য সকল কিছুকে ছাড়িয়ে যায়। সচেতন সাহিত্যিক যুগের ও কালের সঙ্গে তার পরিচয় নিবিড় করে নিতে বাধ্য হয়, সেই সঙ্গে ইতিহাসকে স্পষ্ট করে দেখবার সুযোগ খোঁজে। স্পষ্ট করতে গিয়ে সময় অনেক তার ব্যয় হয়; সাহিত্য- সৃষ্টির কেন্দ্র থেকে হয়তো সরে দাঁড়ানোর জন্যে শাস্তিও সে মাথা পেতে নেয়, এটা নিশ্চয়ই আশঙ্কার। তবু ইতিহাসচর্চায় নিজেকে আমি কালের সঙ্গে বুঝে নিতে চেয়েছি, সময় ও পরিবেশকে বুঝতে চেষ্টা করেছি এবং প্রচলিত ধারণার বিচার ও বিশ্লেষণ করে নিজের বিশ্বাসকে যাচাই করে নেবার জন্যেই ইতিহাসের আমার এই অনুসন্ধিৎসা। এই ইতিহাসের মধ্যে ভারতীয়তার প্রতি আমার কৌতূহল জেগেছে; আমার মনে হয়েছে ভারতীয়তার সঙ্গে গ্রীক মনের অদ্ভুত যোগ আছে অনিবার্য শক্তির সামগ্রিক উপলব্ধির মধ্যে; দ্যাবাপৃথিবী যেমন ঋতকে শৃঙ্খলাশক্তিকে মেনে চলে, তেমনি এক বৃদ্ধা সুতো বুনে চলেছে, এই সুতো বোনার মধ্যেই প্রত্যেকের ভাগ্য নিহিত; এই ঋতকে অস্বীকার করলে যেমন বিপদ, তেমনি বৃদ্ধার বোনা সুতো ছিঁড়ে গেলেই জীবন শেষ। য়ুরোপীয় সভ্যতার বীজ লাতিন ধ্যানধারণায়, তার সামঞ্জস্য ও রূপের নিটোলতায় ; এর সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার যোগ আছে এবং বিরোধও আছে। ভারতীয়তার এইসব বোধকে জাগিয়ে দিয়েছিলেন ও উদ্দীপিত করেছিলেন ডঃ নীহাররঞ্জন রায় আমাকে লেখা তাঁর চিঠিতে ও ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনায় । আমাদের ভারতীয়তা যে কুমারস্বামী-বর্ণিত আত্মিকতামাত্র নয়, ইয়েট্স ও এলি অটের ভারতীয়তা থেকে পৃথক, উপনিষদে মহাভারতে রামায়ণে এই ভারতীয়তা জীবনের সমগ্র বোধ ও উপলব্ধির মধ্যে দীপ্যমান, তিনিই আমাকে বুঝতে সাহায্য করে- ছিলেন। আমার এই বইয়ে তাঁরই কিছু স্মৃতি তাই ধরা রইলো।
৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭
বার্ণিক রায়
ইতিহাসচর্চা
বাণিক রায় সম্পাদিত
স্ট্যাণ্ডার্ড পাবলিশাস কলেজ স্ট্রীট মার্কেট
কলিকাতা-৭
© বার্ণিক রায়
প্রথম প্রকাশ মাঘ : ১৩৯৩
প্রচ্ছদ : পূর্ণেন্দু পত্রী
স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের পক্ষে সঞ্জীব চক্রবর্তী কর্তৃক ২৫/২৬ কলেজ স্ট্রীট মার্কেট, কলিকাতা-৭ থেকে প্রকাশিত
এবং পাবলিসিটি প্রিন্টার্স এর পক্ষে রবীন্দ্রনাথ সিংহ কর্তৃক
৪৫ আমহার্স্ট স্ট্রীট, কলিকাতা-৭০০০০৯ থেকে মুদ্রিত।
মূল্য : কুড়ি টাকা
