১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহের কথা। ঢাকা থেকে সপরিবারে হেঁটে প্রায় পৌনে দু’শ মাইল দূরত্বের হিলি সীমান্ত অতিক্রমের পর কোলকাতায় হাজির হোয়ে সর্বপ্রথম নকশালবাড়ি আন্দোলনের উত্তাপ উপলব্দি কোরতে সক্ষম হই।
হতবাক হোয়ে দেখলাম কোলকাতার প্রতিটি রাস্তার মোড়ে ডিউটির ট্রাফিক পুলিশকে পাহারা দিচ্ছে দু’জন কোরে সশস্ত্র হোম গার্ড। এদের রাহফেলগুলো ‘জবর দখলের’ ভয়ে লোহার শিকল দিয়ে জোয়ানদের কোমরে বাঁধা। আর্মড পুলিশের দল এ সময় প্রাকাশ্যে যাতায়াতে পর্যন্ত সাহসী নয়; এদের জন্য প্রিজনভ্যানের বিশেষ ব্যবস্থা। প্রতিটি থানার নিরাপত্তার দায়িত্ব অর্পিত হোয়েছে দিল্লী থেকে আগত ‘সি আর পি’ নামক সশস্ত্র বাহিনীর হাতে।
এটা এমন এক সময় যখন সন্ধ্যার পর চৌরঙ্গী এলাকা প্রায় জনশূন্য। মোট্রো সিনেমা হলে দু’টো ‘নাইট শো’ বন্ধ। বড় বড় দোকানগুলোতে বিরাট সব লোহার ‘কোলাপসেবল গেট’ লাগানো এবং এক সঙ্গে একাধিক পুরুষ গ্রাহকের প্রবেশ নিষিদ্ধ। বিত্তশালীদের এলাকাগুলোর অনেক বাড়ির নীচের তলা ভাড়াটে শূন্য। সর্বত্রই এই নকশাল আতংক’।
এধরনের এক নাজুক পরিস্থিতির মোকাবেলায় এ সময় শুধুমাত্র পশ্চিম বাংলায় অবস্থানরত সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশের সংখ্যা প্রায় এক লাখের মতো। প্রায়শই এদের দমননীতি মাত্রাতিরিক্ত হোয়ে দাঁড়াতো। গ্রেফতারের সময় প্রতিরোধ করায় গুলি কোরে নকশাল হত্যা এবং ‘প্রিজন ভ্যান’ ভেঙ্গে পালাবার চেষ্টা করায় নির্বিচারে নকশাল বন্দীদের হত্যার বিষয়গুলোর খুব একটা বিশ্বাসযোগ্যতা ছিলোনা বোললেই চলে।
এসব বেপরোয়া হত্যাকান্ডের ফলে কত নারীর সিঁথির সিঁদুর মুছে গেছে; আর কত মাতার ক্রোড় যে শূন্য হোয়ে গেছে, তা’ আজ পর্যন্ত কেউই সঠিকভাবে বলতে পারে না। অনেক তথ্যই গোপন রোয়ে গেলো।
পশ্চিম বাংলায় ক্ষয়িষ্ণু সমাজ জীবনে এসময় এক ভয়াবহ দুর্দিন। পাকিস্তানী ফৌজি হামলায় পূর্ব বাংলার শরণার্থি হওয়া সত্ত্বেও মাঝে মাঝে মনে হতো নকশাল আদর্শে উদ্বুদ্ধ হোয়ে কেনো এই তরুণ-তাজা প্রাণগুলো এভাবে আত্মদান কোরছে? আর কেনোই বা সিপিআইএম-নকশালদের আদর্শের সংঘাতের এধরনের ভয়াবহ রক্তাক্ত বহিঃপ্রকাশ?
এমনি এক সময়ে একদিকে নকশাল আন্দোলন থেকে চীনা নেতৃবৃন্দের সমর্থন প্রত্যাহার ও নকশাল নেতৃত্বে চরম মতবিরোধ সৃষ্টি এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হোয়ে দাঁড়ালে পশ্চিম বাংলায় নকশাল আন্দোলন স্তিমিত হোয়ে যায়।…
নকশালদের শেষ সূর্য
সম্পাদনায় : এম আর আখতার মুকুল
সাগর পাবলিশার্স
নিউ বেইলী রোড ঢাকা-১০০
ও ঢাকা নিউমার্কেট, ঢাকা-১২০০
প্রথম মুদ্রণ : ১৫ই আশ্বিন ১৩৯৬
১লা অক্টোবর ১৯৮৯
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও অলংকরণ : কালাম মাহমুদ মুনীর খান
কমপিউটার কম্পোজ : শ্রেয়া কমপিউটার্স, ঢাকা
মুদ্রাকর : বিকাশ মুদ্রণ, কাওরান বাজার, ঢাকা
মূল্য : বাংলাদেশ ৫০ টাকা / ভারত ২৫ রূপী/ বিদেশ ৫ ডলার
