এ বছর ভারতের স্বাধীনতা লাভের পঞ্চবিংশ বার্ষিকী উদযাপনে আমরা ব্রতী হয়েছি। যে স্বাধীনতাকে আমরা সযন্তে লালন করি তা অর্জন করতে ভারতের মানুষকে কি সংগ্রাম করতে হয়েছে তার ইতিহাস পুনরীক্ষণ করার এই উপযুক্ত সময়। স্বাধীন ভারতের প্রত্যেক নাগরিকেরই জানা উচিত কতো পরিশ্রমে, কতো রক্তের মূল্যে অর্জিত এই স্বাধীনতা। ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষ এবং তাঁদের নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার জন্য দুঃখবরণ করেছেন,, আত্মত্যাগ করেছেন- তাঁদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের উদ্দেশ্যেই এ গ্রন্থের পরিকল্পনা।
এ উদ্দেশ্যকে সফল করা কিন্তু খুব সহজসাধ্য ছিল না। আমাদের মুক্তিসংগ্রামের রূপরেখা সুপরিচিত ঠিকই। কিন্তু তার সকল বৈশিষ্ট্যকে বিশদভাবে অথচ সংক্ষেপে চিত্রিত করতে, সংগ্রামে বিধি শক্তির অবদানের যথাযোগ্য ছবি আঁকতে গেলে প্রভূত যত্ন, জ্ঞান ও নৈপুণ্যের প্রয়োজন। কাজটি আরো দুঃসাধ্য এই কারণে যে গবেষকদের উপযোগী পাণ্ডিত্যপূর্ণ কোন গ্রন্থ আমরা প্রকাশ করতে চাইনি, চেয়েছিলাম সাধারণ পাঠক, বিশেষ করে তরুণদের উপযোগী স্বাধীনতা সংগ্রামের পাঠযোগ্য একখানি ইতিবৃত্ত।…
১৯৪৬ সালে বি-কেলাসের পাণ্ডুলিপি নিয়ে যখন ফিরি করতে বেরিয়েছিলাম, কোথাও সে পণ্য বিকোয় নি। অনেকে ফিরিওলার নাম শুনেই মুখ ফিরিয়েছিলেন- আমরা ডিগ্রীগুলো সাহিত্যের বাজারে ঢুকবার মারাত্মক ডিসকোয়ালিফিকেশন। রাজনীতি-পক্ক ব্যবসায়ী-মহলও সুবিধা হল না। শুরুতেই ‘জনযুদ্ধ’ ও অহিংস সংগ্রামের’ ব্যাখ্যান দেখে কমরেড ও কংগ্রেসী দাদারা নাক সিঁটকালেন- প্রোপাগা-ার কড়া গন্ধ। নবীনের সন্ধানী চটকদার প্রকাশকরা বললেন- শুধু প্রোপাগাণ্ডা নয় বড় বেশী দর্শন ও পাণ্ডিত্যের ঝাঁজ। এক প্রাচীন বনিয়াদী প্রকাশকের মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম- ভাষায় বড় গুরুচণ্ডালী দোষ।
জেলখানায় আমাকে এই ছিট ধরেছিল। লিখবার জণ্যে কী সে দুর্দান্ত পাগলামি! সহস্র কামনা বাসনা যেন বন্ধন ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে- যেমন আবদ্ধ জলস্রোত মাটির তলে পথ করে ফল্গুর মত বয়ে যায়। সুখ দুঃখ, অতীত বর্তমান বস্তু ও কল্পনা সব যেন মধুময়। ডোরাকাটা জাঙিয়া-কুর্তা, একঘেয়ে প্রাচীর ও গরাদ, ঘড়ির কাঁটায় মাপা দৈনন্দিন ছককাটা জীবন- এই দৈত্যপুরীর মধ্যে যেন ঘুমন্ত কন্যা পড়ে আছে সোনার কাঠির অপেক্ষায়। লোহা ও পাথরে লাগল সোনার কাঠির যাদু। জেগে উঠল সুপ্ত রাজকন্যা, দেহের রস ব্যক্ত করবার মত শিল্পকৌশল আমি কোথায় পাবো? কেবল লিখে গেলাম।
Reviews
There are no reviews yet.